খুলনার পাট ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ হয়নি

বিডি নিউজ ৬৪: খুলনা-যশোর অঞ্চলের সরকারি ৯টি পাটকলের সংকট কাটছে না। আর্থিক সংকটের কারণে গেল মৌসুমী পাট ক্রয় করতে পারেনি এ অঞ্চলের পাটকলগুলো।

২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে মিলগুলোতে পাট ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ হয়নি। যে কারণে বর্তমানে মিলগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী পাট নেই। ফলে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের পাটক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আসন্ন মৌসুমে প্রয়োজনীয় পাট ক্রয়ের দাবি জানিয়েছে পাটকল শ্রমিক নেতারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা-যশোর অঞ্চলের সরকারি ৯টি পাটকলে ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে পাট ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১১ লাখ ৭ হাজার ৪৩২ কুইন্টাল। তবে, ২৬ জুন পর্যন্ত ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৪ কুইন্টাল পাট ক্রয় করা সম্ভব হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে সর্ববৃহৎ ক্রিসেন্ট জুট মিলে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৫৭৯ কুইন্টাল লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাট ক্রয় করা হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ১৫ কুইন্টাল। যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৪ শতাংশ। প্লাটিনাম জুট মিলে ২ লাখ ৮ হাজার ৮৭৫ কুইন্টাল লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাট ক্রয় করা হয়েছে ৮৮ হাজার ৬৯৯ কুইন্টাল। যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ শতাংশ। খালিশপুর(সাবেক পিপলস) জুট মিলে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫৬৮ কুইন্টাল লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাট ক্রয় করা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৮৭ কুইন্টাল। যা লক্ষ্যমাত্রার ৫৪ শতাংশ। দৌলতপুর জুট মিলে ৫৮ হাজার ৩৩৮ কুইন্টাল লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাট ক্রয় করা হয়েছে ২৩ হাজার ৫৫০ কুইন্টাল। যা লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ।

কার্পেটিং জুট মিলে ২৬ হাজার ৫৯৯ কুইন্টাল লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাট ক্রয় করা হয়েছে ১৭ হাজার ৮১২ কুইন্টাল। যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৭ শতাংশ। জেজেআই (যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রি) জুট মিলে ৯৩ হাজার ৪৭১ কুইন্টাল লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাট ক্রয় করা হয়েছে ৪০ হাজার ৫৫ কুইন্টাল। যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ শতাংশ। স্টার জুট মিলে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৯ কুইন্টাল লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাট ক্রয় করা হয়েছে ৫৫ হাজার ৮৫৬ কুইন্টাল। যা লক্ষ্যমাত্রার ৪২ শতাংশ। ইস্টার্ণ জুট মিলে ৭০ হাজার ৩৯৩ কুইন্টাল লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাট ক্রয় করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৭১৭ কুইন্টাল। যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৮ শতাংশ। এছাড়া আলীম জুট মিলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫৪ হাজার ৫৮০ কুইন্টাল। তবে, মিলটি গত বছরের নভেম্বরে বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধের আগ পর্যন্ত ১৯৪ কুইন্টাল পাট ক্রয় করা সম্ভব হয়। মিলটি এখনো বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত জুটমিল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘অর্থাভাবে পাট কিনতে না পারা মিলগুলোতে চরম সংকট রয়েছে। গেল পাট মৌসুমে বিজেএমসি নিয়ন্ত্রনাধীন মিলগুলোতে অর্থযোগান না দেয়ায় বাজেট উৎপাদন ৬৫০ মেট্রিকটনের বিপরীতে ৩শ মেট্রিক টনে নেমে এসেছে। অথচ ২০০৯-২০১০ সালে পাটকল লাভজনক স্থানে ছিল। যা গত ২৮ জুন খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘মৌসুমে পাটক্রয় করতে না পারায় মিলগুলোতে পাটের চরম সংকট দেখা দেয়। এতে মিলের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। অর্থ সংকটে পাট কিনতে না পারায় বদলি শ্রমিকদের ছাটাই করা হয়েছে। মৌসুমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনতে না পারায় ফড়িয়া ও বেপারীদের কাছ থেকে উচ্চ মূলে পাট কিনতে হয়। তিনি আসন্ন মৌসুমে পাট ক্রয়ের জন্য অর্থ প্রদানের দাবি জানান। তবে, বিজেএমসি’র উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞার থাকায় এ বিষয়ে খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোর কর্মকর্তারা মুখ খুলছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেএমসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে মূলত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পাট ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। মিলগুলোতে গড়ে ৫ দিনের পাট রয়েছে। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। চলতি মৌসুমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাট যাতে ক্রয় করা যায় সে বিষয়ে বিজেএমসি চেষ্টা করছে। অর্থের যোগান হলে মৌসুমেই প্রয়োজনীয় পাট ক্রয় করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *