প্রত্যেক ব্যবহারকারী বা দর্শককে যার যার মতো করে মুভি দেখার পরামর্শ নেটফ্লিক্স নিজেই দেয়। কিভাবে এটা করে নেটফ্লিক্স? কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে আমি হরর ফিল্ম ই দেখতে চাই , এবং সেটা এই রকম ই সম্ভবত। কারো ক্ষেত্রে দেখি সারাদিন তুর্কি টিভি সিরিয়ালের লিস্ট আসছে, তার নেটফ্লিক্সের পেজে । এর কারণ হলো , হয়তো সে যে এই রকম টিভি সিরিজ পছন্দ করে , তা তার নেটফ্লিক্স দেখার ইতিহাস থেকেই দেখা যায়।
নেটফ্লিক্সের রিকমেন্ডেশন সিস্টেমটা কিভাবে আপনাকে সমা্জচ্যুত হওয়া থেকে রক্ষা করে
আসিফামি রহমান সৈকত
১৫ অক্টোবর ২০২০
প্রত্যেক ব্যবহারকারী বা দর্শককে যার যার মতো করে মুভি দেখার পরামর্শ নেটফ্লিক্স নিজেই দেয়। কিভাবে এটা করে নেটফ্লিক্স? কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে আমি হরর ফিল্ম ই দেখতে চাই , এবং সেটা এই রকম ই সম্ভবত। কারো ক্ষেত্রে দেখি সারাদিন তুর্কি টিভি সিরিয়ালের লিস্ট আসছে, তার নেটফ্লিক্সের পেজে । এর কারণ হলো , হয়তো সে যে এই রকম টিভি সিরিজ পছন্দ করে , তা তার নেটফ্লিক্স দেখার ইতিহাস থেকেই দেখা যায়।
রিকমেন্ডেশন কি খারাপ কিছু ? যারা স্বাধীনভাবে নিজের পছন্দ মতো কিছু খুজে বের করতে চায় তারা এটাকে এড়ায়।কারণ তাদের ( আমাদের ঘাড় ত্যাড়া) যতোই পরামর্শ দেয়া হোক না কেনো তারা তাদের মতোই চলে।তারা নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে চায়, তা ভালো হোক বা খারাপ। সিদ্ধান্ত আমার , দায়িত্ব আমার। যারা নিজেরা জানে না যে তারা কি দেখবে , তাদের জন্য এই পরামর্শ বা এই রিকমেন্ডেশন হয়তো অনেক বেশি দরকার , নইলে তারা নিজেরাই একদিন বিরক্ত হয়ে নেটফ্লিক্স ছেড়ে চলে যাবে এবং ইহজগতের একটা আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে, নেটফ্লিক্স কে কান্নার সাগরে ভাসিয়ে, তাকে মাসে ১৩ ডলার থেকে বঞ্চিত করবে । তার খাবার কেড়ে নিবে।
নেটফ্লিক্স এই ১০ ডলার রক্ষার জন্য, আপনাকে যাতে তার জীবন থেকে হারিয়ে না ফেলে , তারে ছাড়া যাতে আপনে যদু-মদু-হই-চই কোনো দিকে যেতে না পারেন, সেই জন্য , সে যা যা করেঃ
১। আপনি কখন কি দেখেন সেটা খেয়াল রাখে, লিখে রাখে এবং সেটাকে আপনে ১০ এ কতো নাম্বার দেন সেটা মনে রাখে।ইহাকে রেটিং বলে।
২।আপনার মতো যারা একই মতাদর্শে বিশ্বাসী, একই মাজহাবে তুষ্ট , তারা কি দেখতে চায় , কি পাইতে চায় জীবনে, নেটফ্লিক্স সেটা হিসাব করে আর মনে রাখে।
৩। কোন অভিনেতা অভিনেত্রীর দিকে আপনে অপলক চেয়ে থাকেন, কোন ধরনের টাইটেল দেখলে আপনে না বুঝেই ক্লিক দেন , কোন বছরের বা সময়ের টিভি সিরিজ বা কোন ভাষা বা দেশের মুভি দেখার জন্য আপনে ইচ্ছাপোষণ করেন । সেইটা নেটফ্লিক্স মনে রাখে। এতো কিছু আসলে মানুষের মনে রাখা সম্ভব না। কারণ মেমোরি বা স্মৃতির এবং সেটা প্রসেসিং বা হিসাব করে আবার ভাবনায় আনার কাজটায়, মানুষের একটা সীমাবদ্ধতা আছে, কম্পিটার বা কম্পিউটীং এই জায়গাতেই আগাইয়া গেসে, যে কারণে এইরকম অনেক মুভি দেখবেন যে রোবট ই মানুষ রে চালাইতাসে, যদিও আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত দিনের শেষে মানুষের পক্ষেই বাক্সের বাইরে, অভাবনীয় কিছু করার, ভাবার ক্ষমতা আছে , যা রোবটের কোডিং এর কোথাও দেয়া নাই । কোনো না কোনো জায়গাতে সে ঠিকই রোবটকে ল্যাং মাইরা দিবে
এগুলোর বাইরেও নেটফ্লিক্স যেটা খেয়াল করে সেটা হলোঃ
আপনে কখন দেখেন , কয়টায়, কোন কোন দিন
ল্যপটপে দেখেন নাকি টিভিতে নাকি স্মার্টফোনে
কতোক্ষণ ধইরা দেখন, একবার ঠিকঠাক বোতল ( কোকের!!) নিয়ে বসলে।
কলাবোরেটীভ ফিল্টারিং (CF) একটা এলগরিদম বা আইন বা নিয়ম আছে, যেটা দিয়ে পরামর্শ দেবার কাজটা করা হয় , অনেক সময় , প্রায়ই। দুইজন দর্শক যাদের একই রকম রেটিং দেবার ইতিহাস আছে, বিভিন্ন টীভি সিরিজ বা মুভির ক্ষেত্রে , তাদের মধ্যে আসলে আচরণে মিল থাকার সম্ভাবনা প্রবল। সেটাকে মাথায় রেখে যখন তাদের মধ্যে একজন নতুন কোনো টিভি সিরিজ দেখে এবং রেটিং দেয় তখন , আরেক বন্ধুকেও সেটা দেখার জন্য পরামর্শ দেয়া হয় । এই নিয়মটা মেনে প্রায়ই আপনাকে নতুন কোনো সিনেমা দেখার বুদ্ধি দেয় নেটফ্লিক্স। ব্যপারটা তথ্য রাখা এবং সেখান থেকে বিশ্লেষণ বা প্রসেসিং করে আপনাকে পরামর্শ দেবার একটা নিয়ম বা আইন বা এলগরিদম। দেখেন এগুলো কিন্তু কঠিন কিছু না, একটা অনুষ্ঠানে একজন আসলো ঢাকা থেকে , তারে আপনে কাচ্চি বিরিয়ানী খাবার পরামর্শ দিলেন সেটাই স্বাভাবিক, কারণ আগের ১০ জন যে ঢাকা থেকে এসেছিলো তারা এটাই অর্ডার দিয়েছিলো, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আপনে এটা করেছেন। কিন্তু বুদ্ধিমানরা অনেক সময় এটা করবে যে, জীবনে তো বহুত কাচ্চি খাইসি, আজকে দেখি এই ব্যংককে ( থাইল্যন্ড ) এ এরা স্যুপ কি কি খায়, কতো রকমভাবে খায় , এই অভিজ্ঞতাকেই তারা দারুণ মনে করে, আমিও করি, আমাদের উপর রিকমেন্ডেশন খাটে না। এটা তাদের উপরই খাটে বেশি যারা আমেরিকা বা থাইল্যন্ড এ ৭ দিনের জন্য বেড়াইতা যাইয়াও ভাত আর কাচ্চি বিরিয়ানি খুজে। ভাত না পাইলে তারা মইরাও যাইতে পারে , এইজন্যই নেটফ্লিক্স তাদেরকে পরামর্শ আর রিকমেন্ডেশন দিয়া বাচাইয়া রাখে। নিজেরাও ভাতের হোটেল দিয়া বাইচা থাকে।
আরেকটা উপায় হলো কনটেন্ট ভিত্তিক ফিল্টারিং (CB) , এটা করা হয় , দর্শক্ কি কি দেখলো , কোন ধরনের মুভি দেখলো, জনরা, সিনেমার নাম, কোন সালের সিনেমা , অভিনেতা,অভিনেত্রীর নাম এই সব তথ্যের ভিত্তিতে। এই এলগরিদম কে কাজে লাগানোর জন্য দর্শকের আগের ইতিহাস জরুরি, তার পছন্দের বা চাহিদার ভিত্তিতে। মূলকথা হলো দর্শকের অগ্রাধিকারকে চিহ্নিত করা এবং তার অবস্থান বুঝে , তার ডিভাইসের , ইন্টারনেট এর গতি অনুযায়ী তাকে পরামর্শ প্রদান করা।
তাহলে আমরা এতোক্ষণ দেখলাম যে দুইরকমভাবে এটা করা হয়,
কলাবোরেটিভ ফিল্টারিং মানে ভাই-ব্রাদাররা কে কি দেখছে সেই হিসাবে উপদেশ
আরেকটা হচ্ছে
কনটেন্ট ভিত্তিক ফিল্টারিং মানে ভাইজানে কি দেখে , কখন দেখে, কিভাবে দেখে (মানে পজিশন কি !!! এইটা মনে হয় বাদ গেসে তাদের লিস্ট থেকে ), কতোক্ষণ দেখে , কাদের দেখে সেই হিসাবে উপদেশ
তাইলে বাকি থাকলো দুইটা মিলাইয়া যদি কিছু বলা যায়, যেমন সৈকতের বন্ধু শিশির তুর্কি ইতিহাসভিত্তিক টীভি সিরিজ এরতুগুল দেখে তাই সৈকতও এটা দেখার সম্ভাবনা আছে ( কোলাবোরেটিভ ফিল্টারিং) আবার সৈকতের নিজেরও তুর্কি টিভি সিরিজ দেখার ইতিহাস আছে ( কনটেন্ট-ভিত্তিক ফিল্টারিং), এই দুইটা ফিল্টারিং এর একত্রে কাজ করে , সৈকতকে এরতুগুল দেখার পরামর্শ দিবে নেটফ্লিক্স , এইটা হয়ে যাবে হাইব্রিড এলগরিদম। আজকাল বাংলাদেশে হাইব্রিড শব্দটা যথেষ্ট উচ্চারিত হচ্ছে। এটাই কি ভবিষ্যত?
ধারণা তো কিছুটা পাওয়া গেলো নাকি!
আরেকটা ব্যপার আছে যেটা নেটফ্লিক্স হয়তো ভাবে, যে আপনে গেম অফ থোরন্স (Game of Thrones ) না দেখলে এই সমাজ, এই জনপদ আপনাকে মেনে নেবে না, আপনাকে এলিয়েন বা সমাজের বাইরে ফেলে দিবে। আপনে কি পারবেন সমাজের বাইরে যেতে?