বিডি নিউজ ৬৪: শহরের শপিং সেন্টারগুলোতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করেই বিপনী বিতানগুলোতে এখন ক্রেতাদের ভিড়। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটার ধুম। আর বিক্রেতারা ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ি পোশাক সরবরাহে পার করছেন বছরের সবচেয়ে ব্যাস্ততম সময়।
এবারের ঈদে শহরের সুরমা হকার্স সমবায় মার্কেট, লন্ডন প্লাজা, দ্দোজা শপিং সেন্টার, নেজা প্লাজা, ইউনাইটেড শপিং সেন্টার, মৌলা বকস শপিং সেন্টার, এলি প্লাজা, প্রিয়াঙ্গণ মার্কেটসহ সবগুলো মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পরার মতো। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ এবার পোশাকের মূল্য অন্যবারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যে কারণে পছন্দ হলেও সাধ্যের মধ্যে না থাকায় পোশাক কিনতে অনেকটাই ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তাদের।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ীদের দাবি এ বছর অন্যবারের চেয়ে পোশাকের গুণগত মান ভালো হওয়ার কারণে দামটাও সেরকমই নিতে হচ্ছে তাদের। তবে তারা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন না বলে দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার শহরের শপিং সেন্টারগুলো ঘুরে পোশাকের মূল্য ও ক্রেতাদের ভোগান্তির বিষয়টির সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করেন বাংলামেইলের এ প্রতিবেদক।
এ সময় আলফাত স্কায়ার এলাকার দ্দোজা শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যের সূত্রে জানা যায় দ্দোজা শপিং সেন্টারে ছেলেদের বিভিন্ন ধরনের প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যে। এছাড়া শার্ট ৬শ টাকা থেকে ৯শ টাকা,পাঞ্জাবি ১১শ টাকা থেকে ১৫শ টাকা, নারীদের বিভিন্ন ধরনের শাড়ি সর্বনিম্ন ৪শ টাকা থেকে শুরু করে ৩৪ হাজার টাকা, লুঙ্গি ২৫০ টাকা থেকে ৯শ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
আলফাত স্কয়ার এলাকার নেজা প্লাজার ব্যবসায়ীদের তথ্যসূত্রে ছেলেদের বিভিন্ন ধরনের প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৬শ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার ৪শ টাকা পর্যন্ত মূল্যে। এছাড়া শার্ট ৫শ টাকা থেকে ১৫শ টাকা, পাঞ্জাবি ৮শ টাকা থেকে ১ হাজার ৯শ টাকা, নারীদের বিভিন্ন ধরনের থ্রি-পিস ১৫শ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা, শাহারা ২৫শ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা, শাড়ি ৫শ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা, রাজরাণী ২ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা, মহারাণী ২ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, শিশুদের বাজিরাও মাস্তানি ১৫শ টাকা থেকে শুরু করে আড়াই হাজার টাকা, লেডিস জিন্স প্যান্ট ৩শ টাকা থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত মূল্যে।
এদিকে, মুক্তারপাড়া এলাকার লন্ডন প্লাজার ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী ছেলেদের প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ৭শ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা মূল্যে। পাশাপাশি শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৭শ টাকা থেকে ১৭শ টাকায়, পাঞ্জাবি ৭শ টাকা থেকে ২২শ টাকায়, শাড়ি ৪শ টাকা থেকে শুরু করে ৪৬ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, সুরমা হকার্স সমবায় মার্কেটে ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকা থেকে ১৬শ টাকা মূল্যে, প্যান্ট ৭শ টাকা থেকে ২২শ টাকা, পাঞ্জাবি ৫শ টাকা থেকে ৩২শ টাকা, শাড়ি ৪শ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা, লেহেঙ্গা ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, সাহারা ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যে।
শপিং সেন্টারগুলোর আলাদা আলাদা মূল্য নির্ধারণ ও পোশাক ক্রয়ে ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে শহরের হাসন নগর এলাকার এক ক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন,‘বাজারে এসেছিলাম পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে, যেভাবে ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমাফিক দাম নির্ধারণ করেছে তা শুনেই কেনাকাটার বারোটা বেজে গেছে, এবার কিনবো কি..? পোশাকের যে মূল্য তা অন্যাবারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশিই মনে হচ্ছে, বাজার যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের এ বিষয়টা নজরে রাখা উচিৎ।’
শহরের জেলরোড এলাকার আরেক ক্রেতা সানায়াত উল্লাহ বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটা করতে এসে দর-দাম নিয়ে এক রকম বিপদেই পড়েছি, যারা দোকানে একদরে পোশাক বিক্রি করছেন তাদের সঙ্গে বেশি কথা বলা লাগে না কিন্তু যারা ইচ্ছেমতো মূল্য দিয়ে পোশাক বিক্রি করছেন তারা দাম ছাড়তেই চায় না, পছন্দ হলেও পরে আর কেনা সম্ভব হচ্ছে না।’
লন্ডন প্লাজার পোশাক ব্যবসায়ী লিটন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সারা বাংলাদেশে আমাদের যে পোশাকের যে মূল্য সে অনুযায়ীই বিক্রি করছি, ক্রেতারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী ক্রয় করছেন, পোশাকের অতিরিক্ত মূল্যের যে অভিযোগ উঠেছে সেটা নিয়েও ভাবা উচিৎ কারণ অন্যান্য বারের চেয়ে এবার বাজারে পোশাকের গুণগত মান ভালো।’
সুরমা হকার্স সমবায় মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান মৃদুল বলেন,‘আমরা কোনো পোশাকেরই অতিরিক্ত মূল্য রাখছি না, এক এক শপিং সেন্টারে এক এক ধরনের পোশাক আসে, পোশাকের কোয়ালিটি বলেও একটা কথা আছে, আমরা সে অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে থাকি। বর্তমানে কেনাকাটা কেবল জমে উঠেছে। বাজারে আরো ভালো ভালো পোশাক আসছে। আমরা মনে করি এবারের ঈদে ভালো মানের পোশাক বাজারে এসেছে, শেষ রমজান পর্যন্ত ক্রেতাদের কেনাকাটা এবং আমাদের বিক্রি ভালোই হবে বলে আশা করছি।’
দ্দোজা শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ী মহিবুর আলম শাওন বলেন, ‘আমরা ক্রেতাদের সবচেয়ে ভালোমানের পোশাকটি সরবরাহ করছি, ভালো কোয়ালিটির পোশাকের দামটাও অন্যান্য পোশাকের চেয়ে একটু বেশি হয়। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার বাজারে গুণগত মানসম্পন্ন পোশাক এসেছে। আমরা ন্যায্য মূল্যেই বিক্রি করছি। পোশাকের মূল্য ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে।’