হামার আর কিছু থাকিল না

পানি কমলেও বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। বন্যার পানির কারণে দুর্ভোগ বেড়েই চলছে বানভাসি মানুষদের। দুর্ভোগ কমাতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি কমেছে। কিন্তু ভাঙন তীব্র হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকায় ভাঙছে বসতভিটা ও আবাদি জমি। নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার। ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন সড়কের পাশে।

বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধে আশ্রয় নেওয়া নিম্নআয়ের মানুষ খাবার সংকটে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষের অভিযোগ, কর্মহীন অবস্থায় এক মাস পার করলেও তারা মাত্র ৮/১০ কেজি চাল ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন। আবার অনেক পরিবারের ভাগ্যে কিছুই জুটেনি। এসব পরিবার একবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।

ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ইছলি গ্রামে প্রায় ৬৫০ পরিবারের বাস ছিল। দুবছর আগে বন্যা ও নদীভাঙনে এই এলাকার ৫০টি পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙে অন্য স্থানে চলে গেছে।

বাকি ৬০০ পরিবার সেখানে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু এ বছর কয়েক দফা বন্যার পর নতুন করে এই এলাকা ভাঙছে। নদীর গতিপথ কিছুটা পরিবর্তন হয়ে এবার এই এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত রোববার থেকে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। নদীভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে শতাধিক পরিবার বাড়িঘর ভেঙে দূরে সড়কের পাশে অবস্থান নিয়েছে।

বুধবার সকালে ভাঙনকবলিত ইছলি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মানুষজনের বাড়িঘরের ওঠা পানি নেমে গেছে। কিন্তু বসতভিটা, আবাদি জমি ভাঙছে। বন্যার পর নদীভাঙনে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। গ্রাম ছেড়ে অনেকেই চলে যাচ্ছেন তিস্তা সেতুর উত্তরে কালীগঞ্জ পাকা সড়কের পাশে বসত গড়তে। আবার কেউ অন্য কোনো উঁচু স্থানে ঠাঁই নিচ্ছেন।

কৃষক হাসেম আলী দুটি টিনের ঘর ভেঙে কালীগঞ্জে রাস্তার পাশে চলে গেছেন। ১০ বছর ধরে তিনি ইছলি এলাকায় বসবাস করলেও নদীর ভাঙন এত তীব্র ছিল না। এবার তাঁর বসতভিটা, আবাদি জমিসহ সব চলে গেল নদীগর্ভে। হাসেম আলী বলেন, ‘অনেক বছর থাকি এই গ্রামোত (ইছলি) আছনো। এবার এই গ্রামের মায়া ছাড়ি চলি যাওয়া লাগিল।’

কৃষক আবদুল মালেকের দুই একর আবাদি জমি, বসতভিটা এই চার দিনের নদীভাঙনে সবই চলে গেছে। তিনি বলেন, ‘হামার আর কিছু থাকিল না, তাই টিনের ঘর ভাঙি নিয়া আসি পাকা সড়কের পাশোত উঠছি। শেটে যে ঘর তুলমো সেই টাকাও নাই।’

লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের ইছলি এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুল সামাদ বলেন, ‘এর আগে এই এলাকায় নদীর ভাঙন খুব কম ছিল। বন্যার পানি উঠত বাড়িঘরে। কিন্তু এবার ভাঙন এত তীব্র হয়েছে যে মানুষজন ঘরবাড়ি ভেঙে চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে শতাধিক পরিবার চলে গেছে অন্যত্র।’ তিনি জানান, এমপির পক্ষ থেকে বন্যা ও ভাঙনকবলিত এলাকার ৫০ পরিবারকে এক বস্তা করে চাল ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারিভাবে তালিকা করা হচ্ছে। ভোটার আইডি (নিবন্ধন) কার্ড নেওয়া হচ্ছে। টাকা বরাদ্দ হলে দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *