মাদারীপুরের এক ভণ্ড কবিরাজ চিকিৎসার নামে ধর্ষণের অভিযোগ
মাদারীপুরের এক ভণ্ড কবিরাজ চিকিৎসার নামে ধর্ষণের অভিযোগ

মাদারীপুরের এক ভণ্ড কবিরাজ চিকিৎসার নামে ধর্ষণের অভিযোগ

বিডি নিউজ ৬৪: চিকিৎসার নামে মাদারীপুরের শিবচরে এক লম্পট ভণ্ড কবিরাজ বহু মেয়েকে ধর্ষণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসার নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ করে।

পরে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরে। সম্প্রতি মেয়েটির বিয়ে হয়। ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা প্রকাশ পেলে ঘর ভাঙে নববধূ ঐ মেয়েটির। এ ঘটনায় মেয়েটি থানায় মামলা করলে ঐ ভন্ড কবিরাজের চিকিৎসার নামে মেয়েদের ধর্ষণের ভয়াবহ সব কাহিনী বের হয়ে আসে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ভণ্ড কবিরাজ তাজেল মুন্সীর দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছে এলাকাবাসী।

স্থানীয় ও পারিবারিক অভিযোগে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের সাদেকাবাদ গ্রামের উৎরাইল দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী অনেক দিন ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছিল।

এ অবস্থায় তার মা লোকমুখে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের তাজেল মুন্সী (৫৫) নামের এক ফকিরের কথা জানতে পারে।   ৫ মাস আগে মেয়েকে নিয়ে তার মা দত্তপাড়া ইউনিয়নের মগরা পুকুরপাড় গ্রামের কথিত ফকির তাজেল মুন্সির কাছে যায়। কথিত ফকির তাজেল মুন্সি প্রথম দিন মেয়েটিকে চিকিৎসা হিসেবে পানি পড়া দেয়। পরবর্তী চিকিৎসার জন্য সপ্তাহখানেক পরে তাদের বাড়িতে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদেরকে বিদায় করে।

এর কয়েকদিন পরে তাজেল সাদেকাবাদ গ্রামে মেয়েটির বাড়ি যায়। সেখানে গিয়ে পেটে মালিশ করার জন্য তেল পড়া দেয়। ঐ বাড়িতে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে। এসময় মেয়েটির মা বাড়িতে থাকায় সুযোগ না পেয়ে তাজেল ফিরে যায়। এর কয়েকদিন পর আবারও তাজেল চিকিৎসার নামে ঐ বাড়িতে যায়। মেয়েটির ভাই বিদেশ থেকে মোবাইলে ফোন করায় তার মা মোবাইল নিয়ে ঘরের বাইরে চলে যায়। এই সুযোগে ফকির তাজেল মেয়েটির গায়ে নিজ হাতে তেল মালিশ করার কথা বলে। মেয়েটি অনিচ্ছা প্রকাশ করলে কথিত ফকির তাজেল তাকে ভয় দেখায়। ঐ ফকির বলে, এটা না করলে তার অনেক বড় ক্ষতি হবে। বাধ্য হয়ে মেয়েটি তাকে নিজের শরীরে তেল মালিশ করতে দেয়। মালিশের এক পর্যায়ে তাজেল তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। মেয়েটি বাঁধা দিলে সে বলে এটাই তোর চিকিৎসা।

এ কথা কাউকে বললে তোর ও তোর পারিবারের অনেক বড় ক্ষতি হবে। আর আমি নিজে ইচ্ছা করলে যে কোন সময় যে কাউকে ধ্বংস করে দিতে পারি। তাই এ কথা কাউকে বলা যাবে না বলে সে ঐ বাড়ি থেকে চলে যায়। লজ্জা ও ভয়ে মেয়েটি এ ঘটনা তার পারিবারের কাউকে বলেনি।   এই ঘটনার ৩ মাস পর দত্তপাড়া এলাকার এক মুদি দোকানির সাথে মেয়েটির বিয়ে হয়। বিয়ের প্রায় ২ মাস পর শারীরিকভাবে মেয়েটি অসুস্থ হয়।
২৬ ডিসেম্বর সকালে তার স্বামী তাকে নিয়ে স্থানীয় রয়েল হাসপাতালে আসে। ডাক্তারের পরামর্শে তার আলট্রাসোনোগ্রাম করানো হয়। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার জানায়, সে অন্তঃসত্ত্বা এ কথা শুনে প্রথমে তার স্বামী খুশি হয়। কিন্তু ডাক্তার যখন জানায় সে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন তার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীর কাছে কারণ জানতে চায়।

তখন মেয়েটি তাকে ঐ লম্পট ভণ্ড ফকিরের অনৈতিক কার্যকলাপের ঘটনা খুলে বলে। এ ঘটনা শোনার পর একই দিন বিকেলে পারিবারিকভাকে মেয়েটিকে তার স্বামী তালাক দেয়।
এর পরদিন মেয়েটি ও তার পরিবার দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে গিয়ে ঐ লম্পট ভন্ড ফকিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে।
বুধবার বিকেলে এলাকাবাসী গণধোলাই দিয়ে ভণ্ড ফকির তাজেলকে পুলিশে সোপর্দ করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে  শিবচর থানায় এ ব্যাপারে মামলা দায়ের হয়েছে।

স্থানীয় হাসান মিয়া বলেন, তাজেলের কাছে অনেক মেয়েই চিকিৎসার জন্য আসতো। তাজেল সেই মেয়েদের এলাকার আয়নালের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কৌশলে ধর্ষণ করতো। আমি কয়েকবার ওকে মেয়েদের সাথে অপ্রীতিকর অবস্থায় আটক করেছি। প্রত্যেকবার  ক্ষমা চেয়েছে পার পেয়ে গেছে।
স্থানীয় জিয়াউর রহমান বলেন, মেয়েদের সরলতার সুযোগে এভাবে ফকির নামক ভন্ডরা যাতে মেয়েদের সর্বনাশ করতে না পারে এ জন্য প্রশাসনের আরো তৎপর হওয়া উচিত। আর ডাক্তারদেরও আরো তৎপর হওয়া উচিত যেন ডাক্তারদের চিকিৎসার উপরই মানুষের আস্থা থাকে।
মেয়েটির বোন বলেন, তাজেল একজন ভণ্ড ফকির। সে খুবই ভয়ংকর। আমার বোনের কাছে ঘটনা শুনে আমি তাকে ফোন করি। তখন সে এ ঘটনা কাউকে বললে আমার ও আমার পারিবারের অনেক বড় ক্ষতি করবে বলে আমাকে হুমকি দিয়েছিল। ওর ফাঁসি হওয়া উচিত। যাতে আমার বোনের মত আর কোনও মেয়ের এত বড় ক্ষতি করতে না পারে।

মেয়েটি জানায়, আমার পেটের ব্যথার জন্য মা আমাকে তাজেল ফকিরের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। সে কয়েকবার আমাদের বাড়িতে এসেছিল। ঘটনার দিন আমার মা আমার প্রবাসী ভাইয়ের সাথে মোবাইলে কথা বলতে ঘরের বাইরে গেলে তাজেল আমাকে ভয় দেখিয়ে জোর করে ধর্ষণ করে। এতে আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি। আর এ কারণেই বিয়ের পর ডাক্তারের রিপোর্ট দেখে আমার স্বামী আমাকে তালাক দিয়েছে। আমি ওই লম্পট ভণ্ড ফকিরের ফাঁসি চাই।

শিবচর থানার অফিসার ইনচার্জ জাকির হোসেন বলেন, ধর্ষিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা তাজেল ফকিরকে আটক করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের বিষয়টি সে স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *