বিডি নিউজ ৬৪: নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তির দিনে বরিশালে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নগরীর সদর রোডে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষ হয়। বিএনপি নেতাদের দাবি- তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের উপস্থিতে দুই দফা হামলা চালিয়েছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) গোলাম রউফ জানিয়েছেন- পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাকর্মীরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর সদর রোড তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে মিছিলের প্রস্তুতি নেয়। একই সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও কিছুটা দূরে সদর রোডে অবস্থান নেয়।
সেই সময় বিএনপি কার্যালয়ের দিক থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে একটি বোতল ছুড়ে মারা হয়। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে বিএনপি কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে গেলে দুই গ্র“পের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি সংঘর্ষে রূপ নিলে ছাত্রলীগের কর্মীদের লাঠি হাতে চড়াও হতে দেখা যায়। কিছু সময় পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কিন্তু বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন অভিযোগ করেছেন- নগরীর সদর রোড টাউন হল সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর বেলা ১০টায় এক দফা হামলা চালানো হয়। এ সময় যুব ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
ফলে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রাণ বাঁচাতে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। পরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের দূরে সরিয়ে দেয় পুলিশ ।
তিনি বলেন- কিছুক্ষণ পর বিএনপি নেতাকর্মীরা ফের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু করলে বেলা পৌঁনে ১১টার দিকে ক্ষমতাসীন দলের একদল উচ্ছঙ্খল নেতাকর্মী পুলিশের সামনে লাঠিসোটা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর দ্বিতীয় দফা হামলা চালায়।
এ সময় তাঁরা বিএনপি দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে। সেই দুই দফা হামলায় নারী কাউন্সিলরসহ বিএনপির অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়।
হামলায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আজাদ সিকদার গুরুতর আহত হলে তাঁকে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে।’
বরিশাল জেলা বিএনপির (দক্ষিণ) সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন বলেন- মাঝখানে বন্ধ থাকলেও বরিশালে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার সংস্কৃতি ফের নতুন করে শুরু হলো। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এই হামলায় করণীয় বিষয়ে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার অভিযোগ করেন- ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসকে জনগণের কাছে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং কালো পতাকা মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল।’
কিন্তু বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালিয়ে ক্ষমতাসীনরা আবারও তাদের স্বৈরাচারি মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
তিনি আবারও বলেন- দুই দফা হামলার পর বিএনপি তাঁদের দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রয়েছে। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যুবলীগের একদল নেতাকর্মী বিএনপি অফিসের মাইক খুলে নেয়।
তবে বিএনপির সমাবেশে দুই দফা হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু বলেন- বরিশালে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। কোন্দলের কারণে তাঁরা নিজেরা সংঘাতে জড়িয়ে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপাচ্ছে।’
ঘটনার সময় উপস্থিত জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রাজ্জাক বলেন- পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে বিএনপি হামলার নাটক সাজিয়েছে। তাঁরা নিজেরই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ওপর দায় চাপাচ্ছে।’
bdnews64 বাংলাভাষায় প্রকাশিত দেশের সর্ববৃহৎ সংবাদ পোর্টাল