বিডি নিউজ ৬৪: নববর্ষের প্রথম দিনটিতে হুল্লোড় করাই ছিল উদ্দেশ্য। আর সেই হুল্লোড়ই হল কাল। মিনি ট্রাকের মাথায় চেপে যাওয়ার সময় গাছের ডালে ধাক্কা লেগে রাস্তায় ছিটকে পড়ে প্রাণ গেল দুই যুবকের।
রবিবার ভোরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে আমোদপুর–সিউড়ি রাস্তায় সাঁইথিয়ার আমোদপুর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় পাহাড়পুর কামারশাল মোড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম জীবন দাস (১৮) এবং রণজিৎ দাস (২১)। তাঁদের বাড়ি ওই ফাঁড়ি এলাকার দেয়াশচাঁদপুরে। ঘটনায় আরও তিন তরুণ গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁরা বর্তমানে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। কলেজ পড়ুয়া দুই তরতাজা তরুণের এমন বেঘোরে মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সাঁইথিয়ার ফুলুর পঞ্চায়েত এলাকায় রয়েছে দেয়াশচাঁদপুর গ্রাম। এ দিন মাইথনে পিকনিক করতে যাবে বলে ভোর ৪টে নাগাদ বাড়ি থেকে একটি মিনি ট্রাকে চেপে বেরিয়ে পড়েছিল ১৮-২২ বছর বয়সী ২৩ জন তরুণ। প্রায় প্রত্যেকেই কলেজ পড়ুয়া। রণজিৎ সাঁইথিয়া অভেদানন্দ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। একই কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র জীবন। সঙ্গীরা জানিয়েছেন, বাকিরা গাড়ির পিছনে বসলেও সেখানে বসতে মন চায়নি রণজিৎ, জীবন-সহ পাঁচ বন্ধুর। ভোরের কনকনে ঠান্ডা হাওয়া, কুয়াশা উপেক্ষা করে তাঁরা চেপেছিল গাড়িটির হুডে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সঙ্গীর কথায়, ‘‘গাড়িটি ঠিক ভাবেই চলছি। হঠাৎ-ই সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাঁ দিকে নেমে যায়। তখনই রাস্তার ধারে থাকা বিশাল বটগাছের ডালে ধাক্কা লেগে ওরা ছিটকে পড়ে।’’ মারাত্মক ভাবে আহত হন সকলেই। তড়িঘড়ি নেমে সঙ্গীরা আহতদের ওই গাড়িতেই তুলে রওনা দেন সিউড়ির জেলা হাসপাতালের পথে। সেখানে পৌঁছনোর কিছু ক্ষণ পরেই মারা যায় জীবন। বাকি চার জনকে বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানোর পথে মৃত্যু হয় রণজিতের। জানা গিয়েছে, জখমদের সিউড়ি পৌঁছে দিয়েই চালক ও খালাসি চম্পট দেয়।
এ দিকে, সন্তানদের হারিয়ে ভেঙে পড়েছে গ্রামের দুই পরিবার। একই ভাবে শোকস্তব্ধ গ্রামও। রণজিতের বাবা মাধব দাস এবং জীবনের মা মহামায়া দাসেরা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘জানতাম ছেলেরা আনন্দ করেত যাচ্ছে। কিন্তু এমন করে যে সব শেষ হয়ে যাবে, ভাবতে পারছি না।’’ জীবনের বন্ধুরা বাকিদের নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে গিয়েছেন। এ দিন তাঁরা প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। পুলিশের বক্তব্য, শুধু মাত্র হঠকারিতার জন্যই এ ভাবে প্রাণ হারাতে হয়েছে। ওই তরুণদের মদ্যপ হয়ে থাকাটাও অসম্ভব নয় বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। আর সেই কারণেই হয়তো এত ভোরে ঠান্ডায় ওই তরুণেরা বেপরোয়া ভাবে গাড়ির মাথায় চড়ে বসেছিলেন।
জেলা পুলিশের একাধিক কর্তা বলছেন, ‘‘পিকিনিকে এবং যাওয়া-আসার পথে মদ খাওয়া এবং ডি-জে বক্স বাজিয়ে হুল্লোড়বাজির চল এখন আরও বেড়েছে। পিকনিক স্পটগুলিতে নজরে রাখতেই হয়। তবে জেলার সর্বত্র চোখে চোখ রাখা কার্যত অসম্ভব।
bdnews64 বাংলাভাষায় প্রকাশিত দেশের সর্ববৃহৎ সংবাদ পোর্টাল