বিডি নিউজ ৬৪: কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর মহিউস সুন্নাহ আলিম মাদ্রাসায় প্রশ্ন ফাঁস করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ। যানা গেছে কাগজে-কলমে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অর্থের বিনিময়ে ভাড়া প্রার্থীদের ব্যবহার করে চারজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চারজন শিক্ষকের কাছ থেকে ৪০ লক্ষ টাকাও নিয়েছেন বলে যানা গেছে।
নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অসৎ উদ্দেশ্যে কুড়িগ্রামের পাঁচপীর কেরামতিয়া আলিম মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। গত রবিবার ওই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
অভিযোগে জানা গেছে, যাদুরচর মহিউস সুন্নাহ আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শহীদ মাসউদ আহমেদ সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে এককভাবে পরিচালনা কমিটি গঠন করেন। এরপর প্রতিষ্ঠানে সহকারি মৌলভী, ইংরেজি, বাংলা ও আরবি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ আহ্বান করা হয়। ওইসব শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় যাদেরকে প্রতিযোগী করা হয়েছে তারা সবাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে ভাড়া করে কাগজে-কলমে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তা তুলে দেওয়া হয় তাদের পছন্দের প্রার্থীদের হাতে। পছন্দের প্রার্থী সহকারী মৌলভী পদে মোস্তাফিজুর রহমান, ইংরেজি বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম লায়ন, বাংলা বিষয়ে সাইফুল ইসলাম এবং আরবি বিষয়ে মহিবুল ইসলামের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
শামসুন্নাহার ও শরফি খাতুন নামের প্রার্থী অভিযোগ করেন, যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের কাছ থেকে অধ্যক্ষ আগেই ১০ লাখ টাকা করে আদায় করেছেন। এরপর পরীক্ষার আগ মুহূর্তে ওই চারজনকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেন অধ্যক্ষ নিজেই। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগ পরীক্ষা নিতে আসা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিদর্শকের প্রতিনিধি হিসেবে একই বোর্ডের পরিদর্শক মুহাম্মদ হোসাইনকে জানানো হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান বঙ্গবাসী অভিযোগ করে বলেন, “মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একজন দুর্নীতিবাজ। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বিক্রিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ইউএনও’র স্বাক্ষর জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগের দায়ে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর বিরুদ্ধে ওইসব দুর্নীতির তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়ায় ২০১১ সালের ২০ মার্চ থেকে তাঁর বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাঁকে অধ্যক্ষ পদ থেকে বরখাস্তও করা হয়। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় অধ্যক্ষ পদে ফিরে আসলে এখন তাঁর সরকারি বিল-বেতন বন্ধ রয়েছে।
মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ থেকে সদ্য ইস্তফা দেওয়া স্থানীয় সংসদ সদস্য রুহুল আমিন বলেন, “ওই অধ্যক্ষ একজন দুর্নীতি ও জালিয়াতিবাজ। আমি সভাপতি পদে থাকাকালে শিক্ষক নিয়োগের কোনো কার্যক্রম ও আলোচনাই হয়নি। অথচ আমি ইস্তফা দেওয়ার ১০ দিনের মধ্যেই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমি নিয়োগ বন্ধ করার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষক বোর্ডের ওই পরিদর্শককে বলেছি কিন্তু তিনি তা শোনেননি। মোটা অংকের টাকা পেয়ে তিনি অধ্যক্ষের কথামতো সব করে গেছেন। ওই নিয়োগ বাতিলের জন্য এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি সাহার আলী বলেন, “ওই নিয়োগ কার্যক্রম ও বিজ্ঞপ্তি আহ্বান আগের কমিটির সভাপতি স্বাক্ষরে হয়েছে। ” সাজানো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শহীদ মাসউদ আহমেদ বলেন, “আমি নিয়ম অনুসারে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছি। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগটি ভুয়া। যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের অভিযোগটিও সত্য নয়। ” নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠান ছেড়ে বাইরে পরীক্ষা নিয়েছি তারপরও পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য নানাভাবে চাপ ছিল। আর নিজের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বোর্ড বসালে তো পরীক্ষা নেওয়াই যেত না। ” নিয়োগ পরীক্ষায় মাদ্রাসা বোর্ডের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি হয়ে উপস্থিত থাকা মুহাম্মদ হোসাইন বলেন, “প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাই নেওয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরীক্ষায় যাঁরা পাস করেছেন তাঁদের নাম জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। “
bdnews64 বাংলাভাষায় প্রকাশিত দেশের সর্ববৃহৎ সংবাদ পোর্টাল