খুলনার ৬ কোম্পানির চিংড়িতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ

 বিডি নিউজ ৬৪: খুলনা অঞ্চলের ছয়টি হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের রপ্তানিযোগ্য বাগদা চিংড়িতে ব্যাকটেরিয়া, এন্টিবায়োটিক ও তুঁতের পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্ত অনুযায়ী এসব জীবাণু থাকলে চিংড়ি রপ্তানিযোগ্য হবে না। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাকটেরিয়া ও এন্টিবায়োটিকযুক্ত বাগদা চিংড়ির পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কেজি। এসব অপদ্রব্য থাকলে মানবদেহে ক্যানসার, লিভার, কিডনি ও ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে। মৎস্য মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবে এসব প্রতিষ্ঠানের চিংড়িতে পজেটিভ পাওয়ায় রপ্তানি ছাড়পত্র দেয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্ত অনুযায়ী রপ্তানিযোগ্য চিংড়ি মানসম্মত বলে কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবের ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হয়। ছাড়পত্র ছাড়া চিংড়ি রপ্তানি করার ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। গত মে-জুন মাসে খুলনার বয়রাস্থ কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবে প্রথম দফা এবং ঢাকাস্থ ফিস ইনস্পেকশন অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবে দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়।

ঢাকাস্থ ফিস ইনস্পেকশন অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবের বায়োকেমিস্ট মো. আশরাফুল আলম ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার মো. মানিক মিয়া সাক্ষরিত রিপোর্টে এন্টিবায়োটিক, ব্যাকটেরিয়া ও তুঁতের পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।

সূত্রটি জানায়, এ দু’মাসে ৩ হাজার নমুনার মধ্যে ৪৪টিতে পজেটিভ পাওয়া গেছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের চিংড়িতে পজেটিভ নিশ্চিত করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- লে. কর্নেল (অব.) কাজী শাহেদ আহমেদের জেমিনি সি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, মো. রেজাউল হকের ব্রাইট সি ফুড লিমিটেড, একই মালিকের মডার্ন সি ফুড লিমিটেড, আলহাজ আব্দুল জব্বার মোল্লার জালালাবাদ ফ্রোজেন ফুডস লিমিটেড, জাহানাবাদ সি ফুড লিমিটেড ও সাতক্ষীরার রোজেন সি ফুডস লিমিটেড।

অপর একটি সূত্র জানায়, জাতীয় আয় বৃদ্ধিসহ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য জালালাবাদ ফ্রোজেন ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার মোল্লা রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে গত এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০১৪ পদক গ্রহণ করেন। মডার্ন ও ব্রাইটের মালিক রেজাউল হক সিআইপি মর্যাদা সম্পন্ন।

কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবের উপ-পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা জানান, দুই মাসে ৪৪টি নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ পাওয়া গেছে। পরীক্ষায় ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেশি এবং টাইফয়েডের ক্ষতিকর জীবানুর অস্তিত্ব রয়েছে। ব্যাকটেরিয়া বেশি থাকলে প্রমাণিত হয় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর স্থানে চিংড়ি মজুদ ছিল।

এ ল্যাবের অন্যান্য সূত্রগুলো জানায়, চিংড়ি শ্রমিকদের হাতের ক্ষত রোধ করার জন্য তুঁতের পানি ব্যবহৃত হয়। পরীক্ষায় চিংড়ির নমুনায় তুঁতের পানির অস্তিত্বও পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোটার্স অ্যাসোসিশেনের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি শেখ আব্দুল বাকী জানান, গলদার গ্লেস বাড়ানোর জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা তুঁতের পানিতে ভিজিয়ে রাখে। তবে এর পরিমাণ বর্তমানে খুবই কম।

ব্রাইট সি ফুড লিমিটেডের ম্যানেজার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, এ অঞ্চলের হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের চিংড়িতে কমবেশি পজেটিভ পাওয়া যায়। তবে ব্রাইট ও মডার্নে উৎপাদিত পণ্য পরীক্ষায় ক্ষতিকারকদ্রব্য পাওয়া গেছে এমন কোনো বিষয় তারা জানতে পারেননি।

অপরদিকে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৩২৮টি নমুনা পরীক্ষা করে পজেটিভ পাওয়া গেছে মাত্র ৬০টিতে। অথচ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৪৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করে পজেটিভ পাওয়া যায় ১০৪টিতে।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে মিশরের একজন বায়ার প্রতারণার অভিযোগ এনে খুলনার কোয়ালিটি সি এক্সপোর্ট ও চালনা মেরিন প্রোডাক্টসের ২০ হাজার ৫শ কেজি খাবার অনুপযোগী চিংড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে ফেরত পাঠায়। ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে অনিয়মের অভিযোগ এনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন লখপুর ফিস ও ন্যাশনাল সি ফুডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মৎস্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *