বিডি নিউজ ৬৪: ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ১০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের ঢেউটিন কেনা আটকে গেল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলে রনি চৌধুরীকে কমিশন না দেয়ায় এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলতি মাসের ১০ তারিখ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এই বিশেষ বরাদ্দের টিন, ১০ কোটি টাকার কম্বল ও আড়াই কোটি টাকার শুকনা খাবার ক্রয়ের টেন্ডার আহ্বান করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার সারাদেশে দুর্যোগ মোকাবেলায় গরীব দুস্থদের জন্য ৬০ কোটি টাকার ঢেউটিন এবং ৪৪ লাখ টাকার কম্বল কিনে। কিন্তু এপ্রিলে হঠাৎ করে কয়েক দফা ভূমিকম্পের ফলে মে মাসের প্রথম দিকে সরকার আরো ৫ কোটি টাকার কম্বল ১৫ কোটি টাকার ঢেউটিন ও ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার শুকনো খাবার কেনার জন্য বরাদ্দ দেয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের থেকে বরাদ্দ পাওয়ার পর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই ত্রাণ মন্ত্রণালয় দুর্যোগ অধিদপ্তরকে টেন্ডার আহ্বানের অনুমতি দেয়। কিন্তু পরে মন্ত্রীর ছেলের সাথে যোগসাজশ করে মন্ত্রণালয় টিনের বরাদ্দ কমিয়ে ৫ কোটির স্থলে ১০ কোটি টাকার কম্বল কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই হিসাবে ১০ কোটি টাকার কম্বল, ১০ কোটি টাকার ঢেউটিন ও আড়াই কোটি টাকার শুকনো খাবার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।
পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি দেখে কে ওয়াই স্টিলমিলস লিমিটেড, সানজি ট্রেডিং, নরসিংদী ষ্টিল, জেবি এন্টারপ্রাইজ এ্যাপোলো ইস্পাত লিমিটেড নামে কয়েকটি ঢেউটিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নেয়। এরমধ্যে সরকার নির্ধারিত রেটের চেয়ে কেওয়াই স্টিল মিল সর্বনিম্ন দর দেয়- প্রতি টনে ২২ হাজার টাকা কম। মানের নিশ্চয়তা দেয়ার পরও মন্ত্রণালয় তাদের প্রতি কোনো সাড়া দেয়নি। উপরন্তু মন্ত্রীর ছেলে রনি চৌধুরী ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০ পার্সেন্ট কমিশন দাবি করে। কিন্তু তারা রাজি না হওয়ায় ১০ কোটি টাকার টিন কেনার ফাইল আটকে যায়।
কে ওয়াই স্টিলমিলের প্রতিনিধি ফারুকুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মন্ত্রীর ছেলে রনি চৌধুরীকে কমিশন না দেয়ায় তারা অনুমতি পাচ্ছেন না। উপরন্তু বিএসটিআই রিপোর্টের অজুহাতে গত পনেরো দিন মন্ত্রণালয় অপচয় করেছে। আজ বৃহস্পতিবার জুন মাসের শেষ কর্মদিবস। এদিন কার্যাদেশ না দেয়া হলে এই ঢেউটিন আর কেনা হবে না।
এদিকে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বিশেষ বরাদ্দের কম্বল কিনতে সরকার যে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে তার একটি কম্বলও সরকারি গোডাউনে জমা না দিয়ে গতকাল বুধবার ১০ কোটি টাকার চেক তুলে নিয়েছে মন্ত্রীর চেরে রনি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন একটি চক্র।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জুন মাসেই অর্থবছরের শেষ মাস এবং এ মাসের মধ্যেই চলতি বছরের সব কেনাকাটা শেষ করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতার কারণে এই সময়টায় অনেক মন্ত্রণালয়েই প্রকল্প বাস্তবায়নে তড়িঘড়ি করতে থাকে। দ্রুত বরাদ্দ ও অর্থছাড় পাওয়া যায়।
এই কারণেই মন্ত্রীর ছেলের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের আদেশে ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদপ্তর তড়িঘড়ি করে ৫ কোটি টাকা করে দুই দফায় দুটি টেন্ডারের মাধ্যমে মোট ১০ কোটি টাকার কম্বল কেনার টেন্ডার আহ্বান করে। এর মধ্যে রয়েছে তালুকদার এন্টারপ্রাইজ, স্টান্ডার্ড বিজনেস, প্রভাতি এন্টারপ্রাইজ ও কাজলা এন্টারপ্রাইজ।
সূত্র জানায়, মন্ত্রীর ছেলেকে কমিশন না দেয়ায় বিএসটিআই যেখানে এখনো টিনের পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে গড়িমসি করে পনেরটি দিন পার করেছে সেখানে কম্বলের রিপোর্ট একদিনেই দিয়েছে বিএসটিআই।
আর একদিনেই ত্রাণ অধিদপ্তরের টেন্ডার কমিটির সুপারিশ হয়ে মন্ত্রণালয়ে সভা শেষে ১০ কোটি টাকার চেকও উঠিয়ে নিয়েছে তালুকদার এন্টারপ্রাইজ, স্টান্ডার্ড বিজনেস নামধারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদাররা। অথচ সরকারি গোডাউনে একটি কম্বলও জমা পড়েনি।
নিয়ম অনুযায়ী আগে মাল সরবরাহ করা হবে পরে বিল পরিশোধ। কিন্তু মন্ত্রীর ছেলের নির্দেশ বলে কথা!
আজ বৃহস্পতিবার চলতি অর্থবছরের শেষ কর্মদিবস। আজকের মধ্যেই ত্রাণ মন্ত্রণালয় টিন কেনার কার্যাদেশ না দিলে এ বছর আর ঢেউটিন কেনার টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত যাবে। আবার নতুন বছরে আর এই টেন্ডার করে টিন কেনার কোনো সুযোগও থাকবে না। আগামী অর্থবছরে আবার নতুন বরাদ্দ পেলে তবেই টিন কেনা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল বুধবার ত্রাণ অধিদপ্তরের পরিচালক ইফতেখার আহমেদকে বারবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
bdnews64 বাংলাভাষায় প্রকাশিত দেশের সর্ববৃহৎ সংবাদ পোর্টাল