বিডি নিউজ ৬৪: অর্জিত ছুটির বিধান না থাকা সত্বেও দ্বৈত নাগরিক হিসেবে আমেরিকায় দু’দফায় অবস্থান ও বেতন নেয়া, চুক্তি ভিত্তিক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিযুক্ত থাকাকালীন ৪ বছরে নিয়মিত কলেজে উপস্থিত না হওয়া,শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বিধি বহির্ভূতভাবে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতসহ কথায় কথায় শিল্পমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে একেএম নুরুল আলম খানের বিরুদ্ধে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন এর অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নলছিটি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে নুরুল আলম খানের গত ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারী অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও কলেজের গভর্নিং বডি গত ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট তাকে দুই বছরের জন্য পুন:নিয়োগ প্রদান করেন। পরবর্তীতে গত ২০১৪ সালের ৯ আগস্ট আবারও দুই বছরের জন্য পুন:নিয়োগ দেয়া হয়,যার মেয়াদ ২০১৭ সালের ১২জানুয়ারী শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই চুক্তিভিত্তিক চাকুরীতে বহাল থাকাবস্থায় দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করে অর্জিত ছুটি দেখিয়ে দু’দফায় আমেরিকায় গিয়ে ৫/৬ মাস অবস্থান করেন বলে জানা গেছে। বিধি বহির্ভূত ছুটির সময়ে বেতন ভাতাও উত্তোলন করেন একেএম নুরুল আলম খান। চুক্তিভিত্তিক অধ্যক্ষ নিয়োজিত থেকে ৪ বছরে বেতন হিসেবে ১৭ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা ও বোনাস হিসেবে ২ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। চুক্তি ভিত্তিক থাকাকালে বোনাস নেয়ার বিধান না থাকলেও তিনি আইন কানুনের তোয়াক্কা করে বোনাস টাকা উত্তোলন করেন। বাস্তবে ৭০ বছরের উপরে বয়স্ক এই অধ্যক্ষ নিজের মেয়ে ডাক্তার হওয়ার সুবাদে সহজেই সিভিল সার্জন অফিস থেকে শারীরীক ফিটনেস সার্টিফিকেট পেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বর্তমান চুক্তি ভিত্তিক অধ্যক্ষের মেয়াদ শেষে সুষ্ঠভাবে কলেজ পরিচালনার জন্য একজন দক্ষ ও কর্মঠ অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও নলছিটি কলেজ জাতীয় করণের লক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োগ,স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর ও অর্থ ব্যয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও অধ্যক্ষ বিধি লঙ্ঘন করে ইচ্ছামত ব্যয় করে যাচ্ছেন এবং পুন:নিয়োগ লাভের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগে জানা গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত একটি ল্যাপটপ ও কলেজের টাকায় কেনা একটি মোবাইল ফোন অধ্যক্ষ বরিশালে নিজ বাসায় ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কলেজে অফিস সহকারী ৩টি পদে কর্মচারী থাকাবস্থায় বিধি বহির্ভূতভাবে উত্তম কুমারকে নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে সিনিয়রিটি বিধান ভঙ্গ করে উত্তম কুমারকে হিসাব রক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করেন। নিয়োগে অনিয়মসহ উত্তম কুমার কর্তৃক অবৈধভাবে বেতন বাবদ নেয়া ১ লক্ষ ২১ হাজার টাকা ফেরত প্রদানের নির্দেশ দেয়া সত্বেও অদ্যাবধি টাকা ফেরত দেয়নি উত্তম। কলেজ কমিটির সদস্য জালাল উদ্দিনকে ১৯৯৬ সালে চেকিং পাওয়ার দেয়া হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি শয্যাশায়ী থাকা সত্বেও নিজের স্বার্থে তার চেকিং পাওয়ার অব্যাহত রাখেন নুরুল আলম খান।
অন্য একটি অভিযোগে জানা গেছে,কলেজের সভাপতি শিল্পমন্ত্রী আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু এমপি শুধুমাত্র সরকারী বেতন বিলে স্বাক্ষর করেন। বাকী আয় ও ব্যয় অধ্যক্ষ নিজের ইচ্ছেমত করেন। কলেজে ভর্তি ও ফরম পূরণে অনলাইন ফি নামে জনপ্রতি ১৫০ টাকা করে গ্রহণ করেন অথচ এই অনলাইন ফি নেয়ার বিধান নেই। ভর্তি ও ফরম পূরণের সময় বোর্ড কর্তৃক ধার্য্যকৃত টাকার ৩/৪ গুন টাকা আদায়,সেশন চার্জ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জনপ্রতি ১ হাজার টাকা ধার্য্য থাকলেও ১৮০০ টাকা করে আদায় করেন। ফরম পূরণের সময়ও সেশন চার্জ গ্রহণ, রেফার্ডধারী শিক্ষার্থীদের বাংলা,ইংরেজীসহ ব্যবহারিক বিষয় না থাকা সত্বেও “ব্যবহারিক ফি” গ্রহণ করে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ব্যাপারে অধ্যক্ষ একেএম নুরুল আলম খানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
bdnews64 বাংলাভাষায় প্রকাশিত দেশের সর্ববৃহৎ সংবাদ পোর্টাল