বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
তিনি বলেছেন যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে এই নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে।
এছাড়া, পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বা পিইসি পরীক্ষা সম্পর্কিত প্রস্তাবনা তৈরি করে তা বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
বুধবার তিনি ঢাকার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এবছর কেন্দ্রীয়ভাবে পিইসি ও এবতেদায়ী পরীক্ষা না নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বা পিইসি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিজ নিজ বিদ্যালয়ে নেয়ার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
“আগে যেমন একটা জায়গায় পরীক্ষাটা হতো – কেন্দ্রভিত্তিক, এটা না করে সেটা স্ব স্ব বিদ্যালয়ে নেয়ার চিন্তা করছি। যাতে জমায়েতটা বেশি না হয়, আমাদের ছেলেমেয়েরা আক্রান্ত না হয়, সেটির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।”
প্রাথমিক পর্যায়ের সমাপনী পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ২০০৯ সাল থেকে অন্য বিদ্যালয়ে গিয়ে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
বিবিসি বাংলাকে মিস্টার হোসেন বলেন, “আমাদের পরিকল্পনাগুলো পাঠিয়েছি (প্রধানমন্ত্রীর কাছে)। এ বিষয়ে চূড়ান্ত যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেটি মেনে চলা হবে।”
দুই-এক দিনের মধ্যে এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলেও জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে এবং এসব প্রতিষ্ঠান খুললে সেগুলো মেনে চলতে হবে বলে জানান জাকির হোসেন।
যেসব নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ জানানো শুরু করেন অভিভাবকেরা।
এরপর গত ১৬ই মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কথা ঘোষণা করে সরকার।
তবে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের বড় রকমের ক্ষতি হচ্ছে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায়, সে সম্পর্কে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সরকার।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলছেন যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে পাঠদান শুরু করার বিষয়ে ১৫-১৬টির মতো খসড়া নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে এবং বিদ্যালয় খুললে তাদের এগুলো পালন করতে হবে।
এসব নির্দেশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে:
১. ক্লাস শুরুর অন্তত ১৫ দিন আগে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। যখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নোংরা হয়ে গেছে। সেগুলো পরিষ্কার করার জন্য আগেই খুলে দেয়া হবে।”
২. স্কুলের কক্ষে প্রবেশের আগে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক করা হবে। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব থাকবে সংশ্লিষ্ট স্কুল কমিটির। যেসব স্কুলে টিউবওয়েল বা পানির ব্যবস্থা নেই, সেখানে পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৩. সব সময় সব শিক্ষার্থীদেরকে মাস্ক পড়তে হবে। মাস্ক পরার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিজেদেরকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
৪. শিক্ষার্থীসহ সবার শরীরের তাপমাত্রা মেপে স্কুলে প্রবেশ করানো হবে। কোন ধরণের জটলা করার সুযোগ দেয়া হবে না।
৫. পাঠ্যক্রম আগের মতোই থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী শ্রেণীকক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে স্কুলের অবকাঠামো এবং শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বিবেচনায় রেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা করবে।
শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে কোন দিন কোন ক্লাস হবে, সেটি নির্ধারণ করে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে।
সুএঃবিবিসি