‘নিজেকে সতেজ করা’ ক্যাপশন লিখে হাস্যোজ্জ্বল ছবি দিয়ে গতকাল নিজের ভ্যারিফাইড ফেসবুকে পোস্ট করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে অ্যান্টিগা টেস্ট শুরুর আগে ছোট্ট একটা বিরতি মিলেছে। এই বিরতিতে ‘রিফ্রেশ’ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন মিরাজ ও তাঁর দল। এ সময়ে শারজার অভিজ্ঞতা ভুলে লাল বলের অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট আঙিনায় নিজেকে প্রমাণের সব পরিকল্পনাও সেরে নেওয়ার কথা মিরাজের।
বাংলাদেশ দলের নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত চোটে পড়ায় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ মিলেছে মিরাজের। জাতীয় দলের নেতৃত্বের প্রথম প্রহরে সাদা বলে পেয়েছেন হারের তিক্ত স্বাদ। শারজায় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতেও বাংলাদেশ হেরেছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে তাঁর শততম ম্যাচে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়েও মিরাজের ব্যাট হেসেছে।
আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মিরাজকে এখন তাকাতে হচ্ছে অ্যান্টিগা টেস্টের দিকে। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে প্রস্তুতি খুব একটা খারাপ হয়নি বাংলাদেশ দলের। টপ অর্ডারের ব্যাটাররা রান না পেলেও মিডল ও লোয়ার মিডল অর্ডার ভালোই ঝালিয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি সেরেছেন বোলাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ নির্বাচিত একাদশকে তাঁরা থামিয়ে দিয়েছেন ৮৭ রানে। তরুণ বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ ১০ বল করেই হ্যাটট্রিক করেছেন।
প্রস্তুতি যেমন হোক, মিরাজের ভালোই জানা আছে, অ্যান্টিগায় কী কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয় বাংলাদেশকে। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে পা রাখলে ২০১৮ সালে অ্যান্টিগা টেস্টে সেই ৪৩ রানে অলআউট হওয়ার দুর্বিষহ স্মৃতি তাড়া করে ফেরার কথা। এই মাঠে ২০২২ সালের টেস্ট দলেও ছিলেন মিরাজ। বর্তমান দলের মাত্র চার ক্রিকেটারের অ্যান্টিগায় টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে – মিরাজ, মুমিনুল হক, লিটন দাস আর মাহমুদুল হাসান জয়। অভিজ্ঞতা আর কঠিন পরিস্থিতিতে লড়ে যাওয়ার মানসিকতা মিরাজকে সহায়তা করবে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে। শারজায় ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, এবার লাল বলে কেমন করেন, সেটি এখন দেখার বিষয়।
গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে যখন শান্তর অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার গুঞ্জন ওঠে, তখন থেকেই পরের অধিনায়ক হিসেবে জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে মিরাজের নাম। শান্ত এখনো অধিনায়কত্ব না ছাড়লেও তাঁর অনুপস্থিতিতে যদি অধিনায়ক মিরাজ ভালো কিছু করে দেখাতে পারেন, তাতে নেতৃত্বের প্রশ্নে বিসিবিকে গভীরভাবে ভাবতে হতে পারে। ক্রিকেট যতই ‘ক্যাপ্টেনস গেম’ হোক না কেন, খেলাটা তো দলীয়। অধিনায়কের এককভাবে সফল হওয়ার সুযোগ কম, তিনি সফল হিসেবে বিবেচিত হবেন দলীয় পারফরম্যান্সের বিচারে। ফল যা-ই হোক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের নেতৃত্ব প্রমাণের এ রকম সুযোগ মিরাজের হাতে কখনও আসে নাই।
এই চ্যালেঞ্জ উতরে যেতে মিরাজ পেয়েছেন বেশ তরুণ এক দল। কোচিং স্টাফেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। ক্যারিবীয় কোচ ফিল সিমন্স বাংলাদেশ দলের কোচ হয়েছেন গত অক্টোবরে। নিয়মিত ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্পকে এই সফরে পাঠায়নি বিসিবি। তাঁর জায়গায় ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করবেন ১৫ বছর পর বাংলাদেশ দলের কোচিং প্যানেলে ফেরা সালাহউদ্দিন। দলে নেই কম্পিউটার বিশ্লেষক মহসিন শেখও। সব মিলিয়ে মিরাজের নেতৃত্বে ক্যারিবীয় দ্বীপে নতুন এক যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশেরও।
টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ক্যারিবীয় দ্বীপে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই কাটছে ক্রিকেটারদের।