আপনি কি জানেন রাতের ব্যায়ামে কি ঘুম নষ্ট হয়?
আপনি কি জানেন রাতের ব্যায়ামে কি ঘুম নষ্ট হয়?

আপনি কি জানেন রাতের ব্যায়ামে কি ঘুম নষ্ট হয়?

বিডি নিউজ ৬৪: ভোরের সতেজ আবহাওয়ায় ঘুম থেকে উঠে ব্যায়ামের কাজটি সেরে ফেলার মতো দিনের শুরুর আর চমৎকার উপায় হয় না। কিন্তু সকালের পাখি যারা, তাদের জন্য এটি কোনো বিষয় নয়। কিন্তু যারা নিশাচর, তাদের কি ব্যায়ামের কোনো সুযোগ নেই?

তাই যারা একটু দেরিতে ওঠেন, তাদের জন্য রাতের সময় ছাড়া ব্যায়ামের সুযোগ বলতে নেই। দিনের কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পরই এ সুযোগ মিলতে পারে। কিন্তু এতে আরেকটি প্রশ্ন থাকে। রাতে ঘুমের আগে যদি ব্যায়াম করা হয়, তবে তা ঘুমের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে? সাধারণ জ্ঞান খাটিয়েই বোঝা যায়, উচ্চ হৃদস্পন্দন, বেড়ে ওঠা তাপমাত্রা এবং অ্যাড্রিনালিন ও কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে কি কখনো ঘুমানো যায়? কিন্তু ব্যায়ামের পর এমনটাই ঘটে। কাজেই ব্যায়ামের পর ঘুমটা নষ্ট হলে তো বিপদ।

তাহলে কি করা যায়? যারা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন বা কাজ করেন, তারা কখন ব্যায়াম করবেন?

আসলে ঘুমের আগে ব্যায়াম করা হলে যতটা ঘুম নষ্ট হয় বলে মনে করা হয়, বাস্তবতা তেমনটি নয়। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের প্রফেসর এবং আন্ডারস্ট্যান্ডিং স্লিপ ডট অর্গের প্রতিষ্ঠাতা ড. স্টুয়ার্ট কোয়ান জানান, ব্যায়ামের সঠিক সময় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পার্থক্য দেখা যায়। অনেক মানুষই রয়েছেন যাদের রাতে ব্যায়াম করলে কোনো সমস্যাই হয় না। তবে যাদের এমনিতেই ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য বিছানায় ওঠা আগে ব্যায়াম সমস্যাকে আরো খারাপের দিকে নিতে পারে।

ড. কোয়ান আরো জানান, শরীরচর্চার কারণে আপনি শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে যাবেন। মানসিকভাবেও কিছুটা চনমনে ভাব হারাবেন। দেহে উচ্চমাত্রায় কর্টিসল এবং অ্যাড্রিনালিন হরমোন বিরাজ করবে। ক্লান্তির কারণে বরং আরো বেশি ঘুম আসার কথা। আর কর্টিসল ও অ্যাড্রিনালিন পেশিতে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করে। গ্লুকোজের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। কিন্তু এ অবস্থা সবমিলিয়ে ঘণ্টা খানিক চলতে পারে। তারপরই সব আগের মতোই হয়ে যাবে।

২০১৩ সালে আমেরিকার ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন এক গবেষণায় বলে, এ কথা বলা হয় যে ঘুমের আগে ব্যায়াম করলে পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু ব্য়ায়াম করলে বা না করলে মানসম্পন্ন ঘুমের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি। ঘুমের মোটামুটি ঘণ্টা চারেক আগে ব্যায়ামের কাজ সেরে ফেললে কোনো সমস্যাই নেই। এ সময়ের মধ্যে অনেক বেশি বা মধ্যম মানের ব্যায়াম করতে পারেন।

আমেরিকায় ১০০০ মানুষের ওপর এ গবেষণায় চালানো হয়। সেখানেই ফলাফল স্পষ্ট হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের ১৭ শতাংশ ঘুমানোর ৪ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করেন। আর তাদের ঘুম যথেষ্ট ভালো ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়ে থাকে। আবার ঘুমের আগে যেকোনো সময় ব্যায়াম করেন ৫৯ শতাংশ মানুষ। রাতে তারাও তৃপ্তিকর ঘুম দিয়ে থাকেন। আবার যে ২২ শতাংশ অনেক বেশি ব্যায়াম করেন (মোটা চার ঘণ্টা), তাদের ঘুমে মোটেও ব্যাঘাত ঘটে না। এ গবেষণায় সবমিলিয়ে দেখা যায়, বেশি ব্যায়াম করেন এমন ৮৩ শতাংশ মানুষই স্বাস্থ্যসম্মত ঘুম দিতে পারেন।

ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন রাতে ব্যায়ামের সঙ্গে উষ্ণ গোসলের তুলনা করেছেন। আরামের গোসলের পর আপনার দেহ যেমন ঠাণ্ডা হয়ে আসে এবং আরামবোধ হয়, তেমনি ব্যায়ামের পর তেমনটাই ঘটে। ফলে ঘুম ঘুম অনুভূতি চলে আসে। অবশ্য ফাউন্ডেশন দিনের বিভিন্ন সময় ব্যায়ামের সঙ্গে ঘুমের গুণগত মানের পার্থক্য নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

ড. কোয়ানের মতে, আমাদের ঘুমের ধরন জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে। সকাল ওঠার অভ্যাস বা রাত জাগার অভ্যাস মানুষের দেহঘড়ি বা সার্কাডিয়ান ক্লকের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। আর সার্কাডিয়ান ক্লকের ওপর জিনের প্রভাব অনেক।

কাজেই যারা রাতে গভীর ঘুম দিতে চান, তাদের বিছানায় ওঠার আগে অন্তত এক ঘণ্টা সময় দেওয়া উচিত শরীরটাকে আয়েশি করে নিতে। আর তা করতে ব্যায়াম এক দারুণ উপায় হতে পারে। তাই এমন সময় ব্যায়াম করুন যেন তার এক ঘণ্টা পর বিছানায় ওঠার সময় হয়ে যায়। তাহলে একটা শান্তিময় ও গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *