হবিগঞ্জে বরাক নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে জনসাধারণ
হবিগঞ্জে বরাক নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে জনসাধারণ

হবিগঞ্জে বরাক নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে জনসাধারণ

বিডি নিউজ ৬৪:  হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়ন। আর এর পাশেই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা মৌলভীবাজারের খলিলপুর ইউনিয়ন। দুই জেলার সীমান্তের মধ্যখানে রয়েছে একটি নদী। নাম বরাক নদী। নদীর ওপারে বরাক নদীর অর্ধেক হবিগঞ্জ ও অর্ধেক মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের খতিয়ানে রয়েছে। ডিজিটালযোগে এই বরাক নদীতে সেতুর জন্যে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার সিমান্ত এলাকার প্রায় ৩৫টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধীক মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

মানুষের বাশেঁর সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হয়। একটি সেতুর জন্য ওই এলাকার লোকজন চিকিৎসা, শিক্ষা, বিদ্যুৎসহ ডিজিটাল বাংলাদেশের নানা আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়য়ই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীসহ ও সাধারণ মানুষের।

নদীটি হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলাবাসীর মিলনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হলেও নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের দোর্ভোগ দেখার যেন কেউ নেই। বাশ দিয়ে তৈরী এ সাকোর উপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কোমলমতি শিশু কিশোর ও বৃদ্ধারা। এই বরাক নদীর মালিক দুই জেলাবাসী। আর তা ব্যবহার করছেন উভয় জেলার স্থানীয় বাসিন্দারাই। প্রতি বছর দীর্ঘ ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্য এ নদীতে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করতে খরচ হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা। এলাকাবাসী চাঁদা তুলে ব্যয়ভার বহন করেন। নদীতে সেতু হলে মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ বাইপাস রাস্তা হিসেবে এটি ব্যবহার করা যাবে।

বরাক নদীতে সেতু না থাকার কারণে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মৌলভীবাজার অংশের প্রায় ৩৫ হাজার বাসিন্দাকে। স্বাধীনতার পর থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করে এলেও আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি নদী তীরবর্তী মৌলভীবাজার অংশের কেশবচর, সাবটিয়া, দেওয়াননগর, হলিমপুর, ঘোড়ারাই, কাটারাই, কঞ্চনপুর, চাঁনপুর, নামুয়া, খলিলপুর ও সাদুহাটি এবং হবিগঞ্জ অংশের ফরিদপুর, নোয়াহাটি, সিটফরিদপুর, ধর্মনগর, আলমপুর, নাজিমপুর, ফরাসতপুর, বখশিপুর, মুকিমপুর ও সিছনপুর গ্রামসহ উভয় জেলার ৩৫ গ্রামের লোকের। যার কারণে অর্থনৈতিক, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগের দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে উভয় জেলার প্রায় ৫০ হাজার লোক।

সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী মরহুম সৈয়দ মহসিন আলীর কাছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একাধিক আবেদন করা হয়েছিল। তারা পরিদর্শন করেছিলেন নদী তীরবর্তী এলাকা।

সর্বশেষ ১৫ আগস্ট মৌলভীবাজার-৩ আসনের (সদর-রাজনগর) অংশের সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসিন ও হবিগঞ্জ-১ আসনের (নবীগঞ্জ-বাহুবল) অংশের সংসদ সদস্য এমএ মুনিম চৌধুরীকে অতিথি করে উভয় জেলার বাসিন্দাদের উদ্যোগে সভা করা হয়েছিল। তারা উভয়েই আশ্বস্ত করেছেন সেতুটি নির্মাণ করে দেবেন বলে। এর সিমান্ত নবীগঞ্জ অংশে রয়েছে উপজেলার আইশকান্দি ইউনিয়নের আইমকান্দি বাজারে র.প স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সানফ্লাওয়ার জুনিয়র স্কুল, উদয়ন বিদ্যাপিঠ, উলখান্দি এতিমখানা, আউশকান্দি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, অরবিট হসপিটাল, কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সৈয়দপুর ফাজিল মাদ্রাসা, ইয়াকুবিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা, দাখিল মাদ্রাসা, ব্যাংক ও বীমাসহ আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।

খলিলপুর ইউনিয়ন মৌলভীবাজার শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে থাকায় নবীগঞ্জ অংশের ওই সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বল্প সময়ে যোগাযোগ করা সুবিধাজনক। বিশেষ করে মুমূর্ষু রোগী ও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোয়াতে হয় ওই অঞ্চলের লোকদের। সেতু না থাকায় নদীর ওপারের নবীগঞ্জ অংশের হাসপাতালগুলোতে যেতে পারে না তারা। যার কারণে বাধ্য হয়ে রোগীর জীবন বাঁচাতে ৩৫ কিমি. দূরের মৌলভীবাজার শহর অথবা ২৫ কিমি. দূরের সরকার বাজার হয়ে শেরপুরে যেতে হয়। ইতিমধ্যে অনেক রোগীই রাস্তায় মারা গেছেন। অথচ ওই সেতু হলে হাসপাতাল যেতে এলাকাবাসীর সময় লাগবে ৮-১০ মিনিট।

ওই আউশকান্দি বাজারের পাশ দিয়েই ঢাকা-সিলেট মহা সড়ক। আর এই মহা সড়ক দিয়ে নবীগঞ্জ হয়ে অতি সহজেই ঢাকা ও সিলেটের সঙ্গে স্বল্প সময়ে যোগাযোগ করা দুই জেলাবাসীর জন্য অতি সহজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *