অস্থায়ীদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক নয়?

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের হিসাব ও অডিট বিভাগের বর্তমান জিএম (চুক্তিভিত্তিক) বদরুল হক খানকে বেসরকারি এবি ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ১৭ জুলাই। গ্রেপ্তার করার পর পুরো একটি সপ্তাহ পার হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়নি। তার একটিমাত্র কারণ তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত। অথচ এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা হলেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হতো।

এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিক জিএম হিসেবে যারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন তাদের বেতন নিয়মিত কর্মকর্তাদের চেয়ে বেশি। অথচ আমাদের কারও যদি গ্রেপ্তার করা হয়, সঙ্গে সঙ্গে সাসপেন্ড করা হবে। তাদের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা নেই। এটা হাস্যকর। স্টাফ রুলের এই আইনটা পরিবর্তন হওয়া দরকার। একদিনের জন্যও যদি কেউ এখানে চাকরি করতে আসে তবে তিনি যেমন সম্মানী পাবেন তেমনই অপরাধ করলে শাস্তির বিধানও থাকতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন্স, ২০০৩ এর ধারা ৫-এ বলা হয়েছে, ব্যাংকের অস্থায়ী কর্মচারীদেরকে যে কোনো সময় কোনোরূপ কারণ দর্শানো ব্যতিরেখে এবং বিনানোটিশে চাকরিচ্যুত করা যায়। সুতরাং, অস্থায়ী কর্মচারীদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত কোনো নিয়ম অনুসরণ বাধ্যতামূলক নয়। তাদের ক্ষেত্রে স্টাফ রেগুলেশন্স মেনে চলার অঙ্গীকার গ্রহণেরও প্রয়োজন হয় না।

অথচ নিয়মিত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে একই আইনের ধারা ২৯-এ বলা হয়েছে কোনো কর্মচারী গ্রেপ্তারকৃত ও আদালতে শাস্তিপ্রাপ্ত হলে করণীয় কি হবে। এ ধারার (ক) উপধারায় বলা আছে, কোনো কর্মচারী ঋণের দায়ে বা অন্যকোনো অপরাধমূলক কাজের জন্য গ্রেপ্তার ও চালানকৃত হলে (কৃত অপরাধের সাথে ব্যাংকের দায়িত্ব পালনের কোনো সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক) গ্রেপ্তারের তারিখ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে হবে। গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের পর যথাশিগগিরই দ্রুত সাময়িক বরখাস্তের আদেশ ইস্যু করতে হবে। এ রূপ সাময়িক বরখাস্তের আদেশ মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।

স্বভাবতই কর্মকর্তারা প্রশ্ন তুলছেন, চুক্তিভিত্তিক একজন কর্মচারী, যার ব্যাংকের নিয়মকানুনকে এতো বেশি পাত্তা দেয়ার দরকার নেই, তিনি আসলে ব্যাংকের জন্য কতটা নিবেদিত হয়ে কাজ করবেন? এমন হলে তো কোনো একটা অপরাধ করার কারণেই সে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরিতে আসতে পারেন। কারণ ওই লোক কোনো অপরাধ করলে তার শুধু চাকরিটাই যাবে। আর ক্ষতির ভার টানবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমনটা হতে পারে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আসলে নিয়ম হলো বাংলাদেশে ব্যাংকে চাকরিরত কাউকে এরকম গ্রেপ্তার করা হলে তাকে সাময়িক একটা পানিশমেন্ট দেয়া। সে চুক্তিভিত্তিক হোক আর নিয়মিতই হোক। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের করা উচিত এবং করেও তাই। এক্ষেত্রে কেন করা হয়নি সেটা আমি আসলে জানি না। পরে যখন বিচারের মাধ্যমে একটা রায় আসে তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জিএম গ্রেপ্তার হয়েছে শুনেছি। গ্রেপ্তারকৃত জিএমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে কি না তা জানি না। আর আইনে আসলে কি আছে সে বিষয়েও আমি অবগত নই।’

তবে জানা গেছে, জিএম বদরুল হককে গ্রেপ্তারের সাতদিনের মাথায়ও (২৩ জুলাই) বরখাস্ত বা অপসারণ করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

উল্লেখ্য, স্টাফ রেগুলেশন্স আইনের ৬ ধারার (খ) উপধারা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো নিয়মিত কর্মকর্তা যদি জিএম সমমর্যাদার হয়, তবে তাকে গভর্নর তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারেন।

গত ১৭ জুলাই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, তার স্ত্রী, দুই ভাই ও এবি ব্যাংকের সাবেক দুই শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই মামলায় এবি ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম- চুক্তিভিত্তিক) বদরুল হক খান এবং আসলাম চৌধুরীর ভাই জসীম উদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে সংস্থাটি।

জানা গেছে, এবি ব্যাংকের প্রায় ৩২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় মামলাটি করেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক মানিক লাল দাশ। আসলাম চৌধুরী ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আসলাম চৌধুরীর স্ত্রী ও রাইজিং স্টিল মিল লিমিটেডের চেয়ারম্যান জামিলা নাজনীন মাওলা, ছোট ভাই ও একই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমজাদ হোসেন চৌধুরী, পরিচালক জসীম উদ্দিন চৌধুরী, এবি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম ফজলুর রহমান এবং ব্যাংকটির সাবেক ডিএমডি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের বর্তমান মহাব্যবস্থাপক (জিএম) বদরুল হক খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *